top of page
  • Writer's pictureNews Bangla

যশোরের গৃহবূধুর নামে ভারতে রেলস্টেশনের নাম

সাজেদ রহমান।। যশোরে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম অগ্নিপুরুষ হরিদাস মিত্র। তার স্ত্রী বেলা মিত্র(বসু)। এই বেলা ছিলেন সুরেশ বসুর কন্যা, সুভাষচন্দ্রের ভাইঝি। জন্ম ১৯২০ সালে, পশ্চিমবঙ্গের কোদালিয়ায়। খুব ভালো ভজন গাইতেন। স্বয়ং গান্ধীজিও তাঁর গান শুনে মুগ্ধ হয়েছিলেন।

১৯৩৬ সালে বিয়ে হয় যশোরের হরিদাস মিত্রের সাথে। তাঁরা দুজনেই নেতাজি সুভাষের অনুগামী ছিলেন। আজাদ হিন্দ এর জন্মলগ্ন থেকেই হরিদাস মিত্র আইএনএ’র সিক্রেট সার্ভিসের কাজ করতেন। আর বেলা মিত্র (বসু) প্রথম থেকেই ছিলেন আজাদ হিন্দের ঝাঁসির রানী বিগ্রেডে। তাঁর কাজ ছিল, বিদেশ থেকে নেতাজি প্রেরিত বিপ্লবীদের গোপন আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে দেওয়া। এ কাজে তিনি অসীম সাহস ও পারদর্শিতার পরিচয় দিয়েছিলেন। এছাড়াও কলকাতা থেকে রেডিও ট্রান্সমিটারের সাহায্যে সিঙ্গাপুরে খবর পাঠানোর কাজে অচিরেই দক্ষ হয়ে ওঠেন। যুদ্ধের শেষদিকে ব্রিটিশ পুলিসের হাতে ধরা পড়েন হরিদাস মিত্র, সঙ্গে জ্যোতিষচন্দ্র বোস, অমর সিং গিল ও পবিত্র রায়।

১৯৪৫এর ২১শে জুন চারজনেরই ফাঁসীর আদেশ হয়। কালক্ষেপ না করে বেলা পৌঁছে যান পুনেয়, মহাত্মা গান্ধীর কাছে। গান্ধীজী বেলাকে দেখে বলেন, ‘এই তো বেলা এসেছ, অনেকদিন পরে তোমার ভজন শোনা যাবে!’ বেলা জানান, ‘আজ আপনাকে ভজন শোনাতে আসিনি বাপু, আজ এসেছি আমার স্বামীর প্রাণ বাঁচাতে।’ সবটা শুনে গান্ধীজী একটু চুপ করে থাকলেন, তারপর বললেন, ‘হরিদাসকে তো আমি চিনি, ওর হয়ে ভাইসরয়কে আবেদন জানাব, কিন্তু বাকী তিনজন? ওদের কথা তো কিছুই জানি না।’ একটি প্রণাম করে প্রায় গমনোদ্যতা বেলা দৃঢ় অথচ শান্তকন্ঠে বললেন, ‘তাহলে থাক, যদি চারজনকেই মুক্ত না করা যায়, তবে কেবল আমার স্বামীর প্রাণ বাঁচাবার দরকার নেই।’ গান্ধীজী সস্নেহে বেলার মাথায় হাত দিয়ে আশীর্বাদ করে বললেন, ‘এই একমুহূর্তে বুঝিয়ে দিলে, তুমি সুভাষের উপযুক্ত ভাইঝি!’ সে সময় ভাইসরয় ছিলেন লর্ড ওয়াভেল। গান্ধীজীর উপর্যুপরি আবেদনে কাজ হল। শেষমুহুর্তে নাটকীয়ভাবে ফাঁসী রদ হল চার বিপ্লবীর। ১৯৪৭-এ বেলা মিত্রর গড়া ‘ঝাঁসির রানি ত্রাণ সমিতি’ সমাজসেবা ও শরণার্থী পুনর্বাসনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছিল।

১৯৫০ সাল থেকে, ডানকুনির কাছে অনেকটা জায়গা জুড়ে শরণার্থীদের আশ্রয় ও প্রয়োজনীয় ত্রাণ দেওয়ার কাজে আত্মনিয়োগ করেন বেলা। সে কাজের কঠিন পরিশ্রমে ধীরে ধীরে তাঁর স্বাস্থ্য ভেঙে পড়তে থাকে। অবশেষে ১৯৫২ এর ৩১শে জুলাই, মাত্র ৩২ বছর বয়সে, এই মহীয়সী নারীর জীবনাবসান হয়। তাঁর স্মৃতিরক্ষার্থে, ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে ওই এলাকায় নির্মিত নতুন রেলওয়ে স্টেশনটির

নাম দেওয়া হয় ‘বেলানগর’। সেই প্রথম কোনো ভারতীয় নারীর নামে একটি রেলওয়ে স্টেশনের নামকরণ হয়। বেলানগর রেলওয়ে স্টেশন হল হাওড়া-বর্ধমান কর্ড লাইন এর একটি গুরুত্ব পূর্ণ রেল স্টেশন। এই স্টেশনটি কলকাতা শহরতলি রেলওয়ে ব্যবস্থার অন্তর্গত একটি ব্যস্ত স্টেশন। হাওড়া জংশন রেলওয়ে স্টেশন থেকে ১১ কি.মি. দূরে স্টেশনটি অবস্থিত।

0 views0 comments
Post: Blog2_Post
bottom of page