ওয়াসিমকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করলেন রোজিনা
- News Bangla
- Apr 20, 2021
- 2 min read
ওয়াসিম-রোজিনা, কিংবদন্তি এই জুটির একজন চলে গেলেন না ফেরার দেশে। সদ্য প্রয়াত সহকর্মীকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করলেন রোজিনা।
নায়িকা হিসেবে ‘রাজমহল’ আমার প্রথম সিনেমা। নায়ক ছিলেন ওয়াসিম। তিনি তখন সুপারস্টার। আর আমি একেবারেই নতুন। আর নতুন হিসেবে এত বড় নায়কের সঙ্গে অভিনয় করতে যাওয়া ছিল বিশাল ব্যাপার। কিন্তু তিনি সে ব্যবধান বুঝতে দেননি। ১৯৭৭ সালে ‘রাজমহল’র শুটিং করি। মুক্তি পায় ১৯৭৮ সালে। তারপর সিনেমাটি ব্যাপক ব্যবসা করে। ‘রাজমহল’ আমার জীবনের গল্প বদলে দিয়েছিল। জীবন বদলে যাওয়ার ঘটনাটিও আমার অভিনয় জীবনের স্মরণীয় একটি ঘটনা। এটি কখনোই ভুলবো না।
তার সঙ্গে আমি প্রচুর ছবিতে কাজ করেছি। সেটা প্রায় ৭০-৮০টি তো হবেই। এত ছবিতে একসঙ্গে কাজ করাটাও বিশেষ। এমন কোনও ঘরানার ছবি নেই যে, আমরা একসঙ্গে অভিনয় করিনি। সামাজিক, রাজনৈতিক, লোক, গ্রাম, দস্যু, রাজকাহিনি- সবই। রাজমহল, মানসী, বিনি সুতার মালা, ভাগ্যলিপি, মায়ের আঁচল- কত সব হিট ছবি আমাদের।
আমি কারও সঙ্গে কারও তুলনা করতে চাই না। সে সময় রাজ্জাক, আলমগীর, ফারুক, সোহেল রানা, জাফর ইকবাল ভাই স্ট্যাবলিশড, সুপারস্টার। সবার সঙ্গে আমাদের ফ্রেন্ডলি সম্পর্ক। তবে ওয়াসিম ভাই অন্যরকম আন্তরিক ছিলেন। খোশমেজাজে থাকতেন। অন্যকে হাসিখুশি রাখতে পছন্দ করতেন। দেখা গেল, শুটিংয়ের মধ্যে নিজেই ‘কাট’ বলে আবার অভিনয় শুরু করে দিলেন।
আবার ওয়াসিম ভাইয়ের সঙ্গে যখন কাজ করতাম, মনে হতো একেবারে বাস্তবে আছি আমরা। যেমন ‘বিনি সুতার মালা’র কথা বলি। এর কাজ কুয়াকাটা ও সাভারে হয়েছিল। এতে ওয়াসিম সাহেবের সঙ্গে আমার প্রেম। কিন্তু গ্রামের মোড়ল আমাকে হরণ করে। পায়ে শিকল বেঁধে পালকিতে করে আমাকে বিয়ের জন্য নিয়ে যাচ্ছে। সেই পালকিওয়ালা হলেন ওয়াসিম! তিনি যখন আমাকে দেখেন, দুজনেই কেঁদেকেটে অস্থির। সেই কান্না শুটিং শেষ হলেও আমরা নিজেদের থামাতে পারিনি। এরপর ফখরুল হাসান বৈরাগী ভাইসহ অনেকে এসে আমাদের কান্না থামানোর চেষ্টা করেন।
এ ছবিতেই আরও একটি দৃশ্য আছে। অন্ধকারে আমি ও ওয়াসিম ভাই দৌড়ে পালাতে থাকি। দুর্ভাগ্যক্রমে আমি পা পিছলে নদীতে পড়ে যাই। বিষয়টি ওয়াসিম ভাই টের পেয়ে সাথে সাথে পানিতে লাফ দেন। আমি সাঁতার জানতাম না। এদিকে আমাদের দেখে মোড়লের লোকজনও পানিতে ঝাঁপ দেয়। তারা ভাবে, তখনো শুটিং চলছে। পরে ওয়াসিম ভাই বলে, ‘তোমরা থামো, এটা দৃশ্য না। রোজিনা পড়ে গেছে!’
আরেকটা বিষয় অনেকেই হয়তো জানেন না, ওয়াসিম ভাই শুধু মিস্টার ইস্ট পাকিস্তানই ছিলেন না, তিনি খুবই স্বাস্থ্য সচেতন ছিলেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন। কখনো মদের ধারে কাছেও যাননি। এমনকি প্রকাশ্যেও সিগারেট খেতেন না।
ওয়াসিম ভাইয়ের সঙ্গে সর্বশেষ দেখা হয়েছিল দুই বছর আগে। বিটিভিতে বুশরা চৌধুরীর অনুষ্ঠানে। এছাড়াও গত শিল্পী সমিতির নির্বাচনে দেখা হয়েছিল। আমি বলেছিলাম, তার সঙ্গে আড্ডা দিতে যাবো। সেটা আর হয়নি। তবে কথা হতো না, তা নয়। মাঝে-মধ্যেই কথা হতো।
সম্প্রতি আমার পরিচালিত ছবি ‘ফিরে দেখা’র কাজে গোয়ালন্দ ছিলাম। তখন ওয়াসিম ভাইয়ের একটি ছবি আমাকে একজন পাঠিয়েছিল। দেখলাম, শরীরটা ভীষণ খারাপ। মাত্রই আমি গোয়ালন্দ থেকে ফিরলাম। কিন্তু তাকে দেখতে আর যাওয়া হলো না। এমন পরিপাটি, বিনয়ী ও আন্তরিক মানুষের বড় অভাব এখন। তিনি চলে যাওয়াতে সেই হাহাকার আরও বেশি করে তাড়া করছে আমাকে। সূত্র-দেশরূপান্তর।
댓글