top of page

গরু পাচার ও সীমান্ত হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনার ফেসবুক স্ট্যাটাস সাংবাদিকের কাল হলো

  • Writer: News Bangla
    News Bangla
  • Apr 19, 2021
  • 4 min read

নিজস্ব সংবাদদাতা, লালমনিরহাট, ১৭ এপ্রিল ॥ ২৫ মার্চ সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলম শাহীন তার ফেসবুক আইডিতে গরু পাচারের একটি সেলফি তুলে দিয়ে লিখেছিলেন, সীমান্ত উন্মুক্ত রেখে গরু পাচার বন্ধ না করে কোন অবস্থাতেই সীমান্ত হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনা সম্ভব নয়। এই ফেসবুকের পোস্টটি এখনও তার এ্যাকাউন্টে রয়েছে। এই পোস্টটিই তার জীবনে কাল হয়ে দাঁড়ায়।

বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে মোটরসাইকেলে কুলাঘাট স্টিল ব্রিজ পার হয়ে বিজিবি চেকপোস্টের সামনে যান এই সংবাদদাতা। এই সময় স্থানীয় টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপ্লোমা কলেজের পরিচালক সোহাগ মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলেন। বিজিবি’র হাবিলদার আনোয়ার হোসেন মোটরসাইকেল দাঁড় করান। এসেই বলেন, তুই শাহীন সাংবাদিক আজ তোর সাংবাদিকতা বাহির করব। তুই ইয়াবা ব্যবসায়ী। তোর মোটরসাইকেলে ইয়াবা আছে। এ কথা বলেই মোটরসাইকেলের সিট খুলে চেক করেন। এই সময় সেখানে বেশ কয়েক জন পোশাক ও অস্ত্রধারী বিজিবি সদস্য ছিলেন।

সেখানে স্থানীয় এক যুবক ভোলা (৩৫) তিনি উপস্থিত ছিলেন। তিনি বিজিবিকে অনেক অনুরোধ করেন। বিজিবি সদস্যগণ এই সময় ভিডিও করতে থাকেন। সাংবাদিক শাহীনের মোটরবাইক চেক করার সময় তিনিও ভিডিও করেন। বিজিবির জনৈক সদস্য তার মোবাইল ফোনটি কেড়ে নেন। তার মোটরসাইকেলে কোন মাদক দ্রব্য না পেয়ে তাকে ও সোহাগকে মারধর করতে করতে কুলাঘাট বিজিবি ক্যাম্পে নিয়ে যান।

সেখানে সাংবাদিক শাহীনকে বারান্দার খুঁটির সঙ্গে বেঁধে নির্মম নির্যাতন চালানো হয়। এক পর্যায়ে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। জ্ঞান ফিরে দেখেন তারা মুখে পানি ঢালছে। নাক মুখের রক্ত ধুয়ে ফেলেছে। পরে রাস্তায় কুড়িয়ে পাওয়া একটি ব্যবহৃত মাক্স মুখে জোর করে পরিয়ে দেয়। তারপর সামনে টেবিল নিয়ে আসে, টেবিল ক্লথ বিছানো হয়। অস্ত্রধারী তিন জন বিজিবি সদস্য অস্ত্র তাক করে এই সংবাদদাতার সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে কোথায় যেন, ছবিটি পাঠায়। ছবিটি মুহূর্তে ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায়।

একজন দুইজন করে বিজিবি কুলাঘাট ক্যাম্পে সাধারণ মানুষ ভিড় জমাতে থাকে। এক পর্যায়ে কুলাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান জোবেদ হোসেন উপস্থিত হন। তার নেতৃত্বে স্থানীয় জনতা আমাকে ছেড়ে দেয়ার জন্য বিক্ষোভ করতে থাকেন। তারা উচ্চৈঃস্বরে বলতে থাকেন, সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলম শাহীন ভাই এমন কাজ করতে পারেন না। তিনি শিক্ষক প্রতিবাদী, তিনি বিনয়ী ও বিপদে আপদে মানুষে পাশে দাঁড়ান। এখানে যারা উপস্থিত তাদের অনেককে তিনি নানা ভাবে সহায়তা করেছেন। ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ ইদ্রিস আলী এই সময় বিজিবি ক্যাম্পে ফোন দিয়ে অনুরোধ করেন। শাহীন ভাই ভাল মানুষ। তাকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি। তাকে আমার জিম্মায় দেন। এই ফোনের পর বিজিবির হাবিলদার আরও ক্ষেপে যান। এ কথা বলেই পুনরায় সাংবাদিককে নির্যাতন করা শুরু করেন। অন্যদিকে সাধারণ মানুষ গভীর রাতে হৈ চৈ করতে শুরু করে। এক পর্যায়ে বিজিবি ক্যাম্প ঘেরাও করে। তখন বিজিবি’র হেডকোয়ার্টার হতে অতিরিক্ত সৈনিক সেখানে উপস্থিত হয়। সাংবাদিককে নিয়ে দ্রুত শহরের দিকে রওনা হন বিজিবির সদস্যগণ। তারা তাকে রাতে হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে সাংবাদিকের প্রাথমিক চিকিৎসা করান। পুনরায় তার চোখ বেঁধে কোথায় যেন নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করা হয়।

পরে তাকে ভোর রাতে লালমনিরহাট সদর থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। থানায় নিয়ে গিয়ে আবারও তাকে ক্যাম্পে নেয়ার চেষ্টা করা হয়। সাংবাদিক শাহীনকে পুলিশের ডিউটি রুম হতে বের করতে পারেনি। এর মধ্যে সাংবাদিকের সহকর্মীগণ সেখানে গিয়ে উপস্থিত হন। ফলে আর তাকে নিয়ে যাওয়া হয়নি। সাংবাদিক শাহীনকে বিজিবির হাবিলদার আনোয়ার হোসেন ও কয়েক জনের পাহারায় সদর থানার ওসি তদন্তের রুমে নিয়ে গিয়ে বসিয়ে রাখা হয়। সেখানে তাকে নানাভাবে হুমকি দেয়া হয়। সে সময় কয়েক দফা বিজিবির সদস্য আনোয়ার কার সঙ্গে যেন, মামলার বিষয়ে কথা বলে মোবাইল ফোনে। তার কাছে সে সময় একাধিক মোবাইল ফোন ছিল।

প্রথমে হাতে লেখা একটি মামলার এজাহার দেয়া হয়। পরে সেই এজাহার ফেরত নিয়ে গিয়ে কয়েক ঘণ্টা পর কম্পিউটারে টাইপ করা এজাহার দায়ের করা হয়। সেই এজাহারে দেখানো হয় তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের সিট কভারের লুকিয়ে রাখা অবস্থায় এক বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার হয়েছে। যার মূল্য মাত্র ৪০০ শত টাকা। তার মোটরসাইকেল, মোবাইল ফোন ও নগদ টাকা এজাহারের উদ্ধার লিস্টে দেখানো হয়। অসুস্থ সহকর্মীকে দেখতে যাওয়ার সময় তার পকটে অনেক টাকা ছিল। সে টাকাগুলো দেখানো হয়নি।

আটক দুই জনের মধ্যে একজনকে ছেড়ে দেয়া হয় ॥ রহস্যজনক কারণে শাহীনের সঙ্গী সোহাগকে ছেড়ে দেয়া হয়। সোহাগকে ছেড়ে দেয়ায় তিনিও স্বজনদের ফোন করে সাংবাদিক শাহীনকে উদ্ধাওে সহায়তা চান। স্টিলের ব্রিজে থাকা যুবক ভোলাকে রহস্যজনক কারণে কেন সাক্ষী করা হয়নি। মামলায় যাদের আটক করলেন, তাদের সাক্ষী করা হয়েছে। উপস্থিত কোন সাধারণ মানুষকে সাক্ষী করা হয়নি। এতেও রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে।

যে কারণে সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলম শাহীনের ওপর বিজিবি ক্ষিপ্ত। গত ২৫ মার্চ সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলম শাহীন তার ফেসবুক আইডিতে পোস্ট দেয়ার পর কুলাঘাট বিজিবি ক্যাম্পের হাবিলদার আনোয়ার হোসেন তাকে ১৫/২০ দিন আগে এক বার কুলাঘাট স্টিলের ব্রিজে আটক করেন। সেখানে সাধারণ মানুষের সামনে তাকে নানাভাবে হেয় করা হয়। বিষয়টি তিনি ১৫ বিজিবি’র অধিনায়ক লেঃ কর্নেল তৌহিদুল আলমকে টেক্স মেসেজের মাধ্যমে জানান। বিজিবি’র অধিনায়ক ফিরতি মেসেজে তাকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন।

কয়েক দিন আগে কুলাঘাট বিজিবি’র ক্যাম্প কমান্ডার আনোয়ার কুলাঘাটের চোরা কারবারিদের ও তার বিশ্বস্ত প্রতিনিধিদের এই সাংবাদিককে হেয় করা হবে বলে জানান। বিজিবি’র গরু পাচার নেটওয়ার্ক ও সীমান্ত ব্যবসার সঙ্গে কারা জড়িত সে জানে না। তাকে জানাব। এই কথা সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলম শাহীনের কানে আসে। তিনি তাৎক্ষণিক বিষয়টি টেক্সট মেসেজের মাধ্যমে লালমনিরহাট ১৫ বিজিবি’র অধিনায় লেঃ কর্নেল তৌহিদুল আলমকে জানান। বিষয়টি দেশের আরও দুইটি গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা সংস্থার মাঠ পর্যায় ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছিল। তারপরেও তার জীবনে নেমে আসে এমন বিপর্যয়।

সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলম শাহীনের জামিন মঞ্জুর ॥ বিজিবি’র কুলাঘাট বিওপি ক্যাম্পের হাবিলদার আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে দায়ের করা এক বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করার মামলায় শুক্রবার সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলম শাহীনকে সিনিয়র চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজেস্ট্রেট আফাজ উদ্দিন দুই হাজার টাকা বন্ডে ভার্চুয়ালি কোর্টে মঞ্জুর করেন। সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলম শাহীনকে সহকর্মীরা কোর্ট চত্বর থেকে মোটরসাইকেল বহরে করে শহর ঘুরিয়ে প্রেসক্লাবে নিয়ে যান। সেখান হতে তাকে সহকর্মীরা পরিবারের সদস্যদের কাছে পৌঁছে দেন।

সাংবাদিকের বর্তমান শারীরিক অবস্থা ॥ জাহাঙ্গীর আলম শাহীন দীর্ঘদিন হতে জটিল ডায়াবেটিস, হাইপার টেনশন, হার্ট ও কিডনির সমস্যায় ভুগছেন। জামিনে ছাড়া পেয়ে তিনি চিকিৎসকের পরামর্শে বাসায় অবস্থান করে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তার সারা শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

সাংবাদিকদের তীব্র প্রতিক্রিয়া ॥ এদিকে শনিবার বেলা ১১টায় জেলায় কর্মরত সকল প্রিন্ট ও ইলেক্টনিক মিডিয়ার সংবাদকর্মীগণ শহরের মিশন মোড় চত্বরে সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলম শাহীনের ওপর নির্মম নির্যাতনের বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন করেছেন।

সাংবাদিকগণ মনে করেন ফেসবুকে ভারতীয় গরু পাচার ও সীমান্ত হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনার বিষয়ে ফেসবুক স্ট্যাটাস দেয়ায় বিজিবি উদ্দেশ্যমূলকভাবে তাকে হেয় করতে এক বোতল ফেনসিডিল দিয়ে মিথ্যাভাবে ফাঁসিয়েছে। তারা অবিলম্বে এই মিথ্যা মামলা নিশর্তভাবে তুলে নেয়ার দাবি জানান। একই সঙ্গে দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। এদিকে শাহীনের পরিবার নিরাপত্তহীনতায় ভুগছে। তাদের বিভিন্নভাবে চুপ করে থাকার জন্য হুমকি দেয়া হচ্ছে। সূত্র-জনকণ্ঠ

Comments


Post: Blog2_Post

Subscribe Form

Thanks for submitting!

01711-250356

©2021 by News Bangla. Proudly created with Wix.com

bottom of page