top of page

যশোরের বিপ্লবী হরিদাসের মৃত্যুদন্ডাদেশ রোধ হয়েছিল গান্ধীর অনুরোধে

  • Writer: News Bangla
    News Bangla
  • Apr 21, 2021
  • 2 min read

সাজেদ রহমান, সিনিয়র সাংবাদিক।। বিপ্লবী হরিদাস মিত্রের ফাঁসির আদেশ হয়েছিল ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দে। ব্রিটিশ সরকার গোপন সামরিক আদালতে তাঁর এবং যশোরের কেশবপুরের ডোঙ্গাঘাটার জ্যেতিষ বসুসহ আরও দুই বিপ্লবীর মৃত্যুদন্ডাদেশ দেয়। গান্ধীজীর বিশেষ অনুরোধে ইংরেজ বড়লাট ওয়াভেল হরিদাস মিত্রের মৃত্যুদন্ডাদেশ মওকুফ করে যাবজ্জীবন কারাদন্ডাদেশ দেন।

এই হরিদাস মিত্রের বাড়ি যশোর শহরে। তাঁর বাবা ছিলেন যোগেন্দ্রনাথ মিত্র যশোরের বিশিষ্ট নাগরিক এবং প্রখ্যাত আইনজীবী।

হরিদাস বাল্যকালে অসহযোগ আন্দোলনের সময় যশোরে জাতীয় বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হলে সেই বিদ্যালয়ে যোগ দেন। সেখান থেকে জিলা স্কুলে পড়ে, পরে কলকাতায় পড়াশোনা করে এমএ এবং ‘ল’ পাশ করেন। কলেজ জীবনে ছাত্র সংগঠনের নেতৃত্বে আসেন। কর্মজীবনে যশোরের জিলা স্কুল, কলেজ, ব্যাংক, সমবায় প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের পরিচালনায় যুক্ত থেকে বিশেষ সুনাম অর্জন করেন। হরিদাস মিত্র বিয়ে করেন নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর ভাই শরৎ বসুর কন্যা শ্রীমতী বেলা দেবীকে। বেলা দেবীও স্বাধীনতা সংগ্রামী এবংতাঁর সুযোগ্য সহধর্মিনী ছিলেন। ইতোমধ্যে আইন অমান্য ও ‘ভারত ছাড়’ আন্দোলনে হরিদাস মিত্র দু’বার জেল খাটেন।

দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধের সময় নেতাজী যখন ‘আজাদ হিন্দ ফৌজ’ প্রতিষ্ঠা করেন, হরিদাস ও তার সহকর্মীরা সেই ফৌজের কলকাতাস্থ গুপ্ত সংগঠনের ক্রিয়াকলাপে যুক্ত হন। ব্রিটিশ পুলিশ ১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দের শেষে তাঁদের কর্মতৎপরতার খবর পেয়ে সকলকে গ্রেফতার করে। ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দে গোপন সামরিক আদালতে তাঁর এবং যশোরের কেশবপুরের ডোঙ্গাঘাটার জ্যোতিষ বসুসহ আরও দু’জন বিপ্লবীর মৃত্যু দন্ডাদেশ হয়। হরিদাসের স্ত্রী বেলা দেবী তাঁদের জীবন রক্ষার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকেন। তখন যুদ্ধ শেষ হয়েছে। গান্ধীজীর বিশেষ অনুরোধে ইংরেজ বড়লাট ওয়াভেল সাহেব ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দের ৫ নভেম্বর মৃত্যুদন্ড মওকুফ করে আসামীদের যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত করেন। ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বরে পন্ডিত নেহেরুর অন্তর্বতীকালীন সরকার গঠিত হলে তাঁরা মুক্তি পান।

স্বাধীনতার পর হরিদাস মিত্র বিভিন্ন সংগঠন বিশেষ করে উদ্বাস্ত আন্দোলনে ঘনিষ্টভাবে যুক্ত হন। সেই সূত্রে ১৯৫৮ এবং ৫৯ খ্রিষ্টাব্দে কারাবরণ করেন। তিনি পরে প্রজা সোশ্যালিস্ট পার্টি ও বিভিন্ন শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা এবং পরবর্তীকালে বাংলা কংগ্রেসের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। তিনি পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় রেকর্ডসংখ্যক ভোট পেয়ে নির্বাচিত হওয়ার পর ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে উক্ত বিধানসভার উপাধ্যক্ষ নির্বাচিত হন।

আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশ মুক্তি সংগ্রাম সহায়ক সমিতি গঠিত হয়েছিল। ওই কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন হরিদাস মিত্র। হরিদাস ও বেলা মিত্রের পুত্র অমিত মিত্র ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী।

এবার একটু পিছনে ফিরে দেখা যাক। নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু যশোরে এসেছিলেন ১৯২৭ থেকে ১৯২৯ সালের ভেতর। ছিলেন যশোর শহরের দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন রোডের (রেল রোড) এই বাড়িতে। এক সময় এখানে ছিল চুংকিং নামের একটি চাইনিজ রেষ্টুরেন্ট। সুভাষ চন্দ্র বসুর ভাইজি জামাইয়ের বাড়ি এটি। অর্থাৎ সুভাষ চন্দ্র বসুর ভাই শরৎ চন্দ্র বসুর মেয়ে বেলা বসুর বিয়ে হয়েছিল এই বাড়ির ছেলে হরিদাস মিত্রের সাথে। তাই বেলা বসু পরে নামের শেষে লিখতেন বেলা মিত্র। নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু ওই বাড়ি থেকে হেটে গিয়েছিলেন যশোর শহরের চিত্রামোড়ে। সেখানে এক জনসভায় তিনি বক্তব্য রাখেন। তারপর যশোর পৌরসভা ওই রোডের নাম রাখে তাঁর নামে ‘নেতাজী সুভাষ চন্দ্র রোড’।

Comments


Post: Blog2_Post

Subscribe Form

Thanks for submitting!

01711-250356

©2021 by News Bangla. Proudly created with Wix.com

bottom of page